গুলবাহার হাতুনের জিবনী
গুলবাহার হাতুন বা এমিনে গুলবাহার হাতুন তিনি মুকরিমে হাতুন নামেও পরিচিত ও উসমানীয় তুর্কি। উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের প্রথম স্ত্রী এবং দ্বিতীয় বায়েজীদের মা হিসেবে উসমানীয় সাম্রাজ্যের ভালিদে
হাতুন ছিলেন। গুলবাহার হাতুন জন্মসূত্রে একজন তুর্কি। তিনি ছিলেন হামজা বে অথবা হালিল বে এর কন্যা এবং মুস্তাফা পাশার বোন। সম্ভবত তিনি প্রাচীন টোকাতের কোনো পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । কারণ তাঁর স্মৃতিতে বায়েজীদ ১৪৮৫ সালে সেখানে একটি মসজিদ এবং স্কুল তৈরি করেছিলেন।
বিবাহবন্ধন: ১৪৪৬ সালে সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ একজন শাহজাদা এবং আমাসিয়ার প্রশাসক থাকা অবস্থায় গুলবাহার তাকে বিয়ে করেন। তার দুজন সন্তান ছিল ১৪৪৭ সালে ডেমোটিকাতে জন্মগ্রহণ করা শাহজাদা বাইজিদ (ভবিষ্যত সুলতান দ্বিতীয় বাইজিদ) এবং শাহজাদী গেভারহান হাতুন। যিনি ১৪৭৪ সালে আক কোয়ুনলু সুলতান উযুন হাসানের পুত্র উঘুরলু মুহাম্মদকে বিয়ে করেন।
১৪৫১ সালে মেহমেদের সিসনে আরোহণের পর গুলবাহার তার সাথে এডর্নিতে যান। তুর্কি ঐতিহ্য অনুসারে সকল শাহজাদাকেই প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে প্রাদেশিক প্রশাসক (সানজাক-বে) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৪৫৫ বা ১৪৫৬ সালে শাহজাদা বাইজিদকে আমাসিয়ার প্রশাসক নিয়োগ করা হয় হয় এবং গুলবাহার তার সাথে যান যেখানে তারা দুজনই ১৪৮১ সাল পর্যন্ত ছিলেন কেবল ১৪৫৭ সাল ব্যতীত কেননা তখন তিনি তার ছেলে বাইজিদের সুন্নতে খৎনা অনুষ্ঠানে যোগদান করতে রাজধানীতে আসেন।
গুলবাহার স্পষ্টতই তার ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং এর সাথে তার নিজের সম্পত্তি নিয়েও। তার সম্পত্তি সুরক্ষিত করার জন্য তিনি ১৪৪৪ সালে কয়েকটি গ্রাম এবং ইন্দেরুন মসজিদের ক্ষেতের উপার্জন গ্রহণ করেছিলেন। গ্রহণকৃত সম্পত্তিসমূহের মধ্যে ছিল আঘিলচিক গ্রাম যেটিকে পরবর্তীতে ১৪৭৯ সালে ভূমি সংস্কারের সময় টিমেরিয়টদের (উসমানীয় ঘোড়সওয়ার সিপাহী) গ্রামে পরিণত করা হয়।
১৪৬৮ সালে মেহমেদ বাঘলুচা গ্রামটি গুলবাহারকে প্রদান করেন। ছয় বছর পর ১৪৭৩ সালে বাইজীদের দরবারের হিসাবরক্ষক হামযা বালি (মৃত্যু ১৪৮৬)’র ছেলে তাজেদ্দিন বে’র নিকট গ্রামটি বিক্রি করে দেন। ১৪৭৮ সাল সম্ভবত ভূমি সংস্কারের ফলেই এই গ্রামের অব্যাহতি বিলুপ্ত হয়েছিল এবং তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই আদেশটি এক বছর পরে জনৈক মৌলানা শেমসেদ্দিন আহমেদ এর অনুরোধে পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছিল, যেটি অনুযায়ী গ্রামটি গুলবাহার হাতুনকে আর ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি এবং তিনি সম্ভবত কোনও আইনি বিবাদের শিকার হয়েছিলেন।
ভালিদে খাতুন পদলাভ : ১৪৮১ সালে যখন গুলবাহার হাতুনের ছেলে বাইজিদ সিংহাসনে আরোহণ করেন তখন প্রথানুযায়ী বাহার খাতুন রাজপরিবারে সর্বোচ্চ সম্মানিত পদ ভালিদে সুলতান (ভালিদে হাতুন) এর পদমর্যাদা লাভ করেন যা তার মৃত্যু অবধি বহাল ছিল। বাইজিদের ক্ষমতায় আরোহণের সাথে সাথেই গুলবাহার হাতুন একজন ভালিদে সুলতানের সমকক্ষীয় ভূমিকাই পালন করেন কারণ সেসময় গদিনাসীন সুলতানের মায়ের উপাধি এবং দায়িত্বসমূহ দাপ্তরিকভাবে নির্ধারিত ছিল না। তৎকালীন সময়ে ভালিদে সুলতান উপাধিটি ব্যবহার করা শুরু হয়নি কারণ উসমানীয় রাজবংশের নারীদের ক্ষেত্রে তখন হাতুন উপাধি ব্যবহার হতো।
লেসলি পি. পিয়ার্স এর তথ্য অনুযায়ী, ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে (প্রথম সুলাইমানের রাজত্বকালে) ভালিদে অর্থাৎ সুলতান মাতা, শাহজাদী এবং সুলতানের প্রধান সঙ্গিনীদের ক্ষেত্রে হাতুন উপাধিকে পরিবর্তন করে সুলতান উপাধি ব্যবহার করা শুরু হয়। এর ফলে ষষ্ঠদশ শতাব্দীর পূর্বে গদিনাসীন সুলতানের জীবিত মাতার ব্যবহৃত উপাধি ভালিদে হাতুন উপাধিটি ভালিদে সুলতান-এ রূপান্তরিত হয় যেটি হাফসা সুলতান সর্বপ্রথম দাপ্তরিকভাবে ব্যবহার করেন। গুলবাহার হাতুন এবং রাজপরিবারের অন্য সদস্যরা সবাই তার ছেলে দ্বিতীয় বায়েজীদের রাজত্বকালে পুরাতন প্রাসাদে বসবাস করতেন যা সরাই-ই আতিক(তুর্কি: saray-ı atik) নামেও পরিচিত।
মায়ের চিঠি সন্তানের প্রতি : সুলতান দ্বিতীয় বাইজিদ তার মায়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসতেন যিনি প্রতি সাক্ষাতেই তার মায়ের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করতেন। এক ঘটনায় গুলবাহার তার ছেলের অনিয়মিত সাক্ষাতের ব্যাপারে অভিযোগ করে তার ছেলের কাছে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন:
আমার সৌভাগ্য, আমি তোমার অভাববোধ করছি, তুমি যদি আমার অভাববোধ নাও করো, তাও আমি তোমার অভাববোধ করি… এসো এবং আমাকে দেখা দাও। আমার প্রিয় বাদশাহ, যদি তুমি শীঘ্রই অভিযানে বের হও, অন্তত একবার বা দুবার এসো যাতে করে তুমি যাওয়ার পূর্বে আমি তোমার সৌভাগ্যমণ্ডিত চেহারাখানি দেখতে পাই। তোমাকে আমি শেষ দেখেছি, চল্লিশ দিন হয়ে গেছে। আমার সুলতান, দয়া করে আমার নির্ভীকতা মাফ করো। তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে…?
গুলবাহারের বায়েজিদের উপর যথেষ্ট প্রভাব ছিল কারণ তিনি কিছু রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিকদের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতেন। বায়েজীদও তার মায়ের কথার গুরুত্ব দিতেন। বায়েজীদকে লেখা গুলবাহারের একটি চিঠিতে তিনি বায়েজীদকে হেরসেকজাদে আহমেদ পাশার বিরুদ্ধে পরামর্শ দেন তবে তাঁর শিক্ষক আয়াস পাশা এবং হিজিরবেওগ্লু মেহমেদ পাশার পক্ষে ছিলেন। ১৪৮৫ সালে, বায়েজীদ তার মা গুলবাহার হাতুনের স্মরণে একটি মসজিদ এবং টোকাত-এ একটি বিদ্যালয় প্রদান করেছিলেন। Read MORE
মৃত্যু :—— গুলবাহার হাতুন ১৪৯২ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং ইস্তাম্বুলের ফাতিহ মসজিদে সমাধিস্থ হন।
২০১২ সালের চলচ্চিত্র, ফেতিহ ১৪৫৩-এ গুলবাহার হাতুন চরিত্রটি তুর্কী অভিনেত্রী শাহিকা কোলদেমির অভিনয় করেছেন।
২০১২ সালের তুর্কী ধারাবাহিক ফাতিহ-এ, গুলবাহার হাতুন চরিত্রটি তুর্কী অভিনেত্রী সেদা আকমান অভিনয় করেছেন।
–সাজিদুর রহমান