Newsখোলা কলাম

শেখ হাসিনার পদত্যাগ

শেখ হাসিনার পদত্যাগ

জয়ের বিবৃতি

রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব

কোটা সংস্কার আন্দোলন যা ২০১৮ সনেই স্টুডেন্টরা শুরু করেছিলো তখন সরকার তা সংস্কার না করেই তা একেবারে বন্ধ করে আন্দোলনকে ঐ সময় ধমিয়ে দেওয়া হয়েছিল।পরবর্তীতে আবার কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় জুলাই মাসের শুরুতেই, কিন্তু সামনে কোরবানির ঈদ থাকার কারণে আন্দোলন মুটামুটি থেমে যায়।

ঈদের পরপরই বিভিন্ন কলেজ-ভার্সিটি ও শিক্ষাঙ্গনের স্টুডেন্টরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল, মানববন্ধন, রোডে অনশনে দেখা যায়। একপর্যায়ে তা আস্তে আস্তে পুরো দেশের সরকারি – বেসরকারি, স্কুল -কলেজ- ভার্সিটিতে ছড়িয়ে পড়ে গড়িয়ে তা তীব্র হতে তীব্র হতে থাকে তখনই সরকারের টনক নড়ে ওটে। তখন বিভিন্ন টিভি -টকশো ও বিবৃতিতে সরকার প্রধান সহ বিভিন্ন নেতাকর্মীরা কথা বলতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব এমন ছিলো যে এ আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতাচুত্য করা।

তখন বিভিন্নরকমভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে সহবস্থান দেখা যায়।একপর্যায়ে পুলিশ প্রশাসন আন্দোলনকে ধমাতে গিয়ে লাঠিচার্জ, কাদানি গ্যাস,টিয়ারশেল,রাবার বুলেট ছুঁড়তে থাকে। পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী কোনো জায়গায় আক্রমণাত্মক কোনো জায়গায় প্রতিহতমূলকভাবে আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করতে থাকে।

এতে বহু মানুষ আহত নিহত হয়,তাতে সহজ, সরল, অবলা,শিশু – কিশুরও মারা যায়। ১৬ জুলাই আন্দোলনে শহীদ হন বেগম রোকেয়া কলেজের স্টুডেন্ট আবু সাঈদ,তার দুদিন পর ১৮জুলাই “পানি লাগবে পানি” বলে বেড়ানো খ্যাত সেই বি- বাড়িয়ার সাহসী বীর “মীর মুগ্ধ “শহীদ হোন। তারা শহীদদের মাঝে অন্যতম এছাড়াও বাংলার বিভিন্ন এলাকায়, শহরে- বন্ধরে শত-শত আহত -ও নিহত হয়।

তখন আন্দোলন আর নির্দিষ্ট কিছু মহলে সীমাবদ্ধ নয় তা এখন হয়ে যায় বাংলাদেশের আপামর জনতার তাতে শরীক হয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী,হেফাজতে ইসলাম ও কওমি ওলামা – ত্বলাবা গড়ে ওটে প্রতিরোধ স্বৈরাশাসকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে সকলেই সরকার পতনের। ইতিমধ্যেই আলেম ওলামা ও মাদরাসার ছাত্র এবং সাধারণ জনতাসহ অনেকে আহত ও শহীদ হয়।

একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন রুপ নেয় “এক দফা এক দাবি ” তে তখন সরকারের পক্ষ থেকে দরপাকড়াও মারধর শুরু হয়। আপামর সাধারণ জনতাও তখন বসে থাকেনি তারা হাতে লাঠি, বাঁশ নিয়ে নেয় আত্মরক্ষার্থে। তখনই কোটা আন্দোলনকারী সমন্বয়কদের নেতৃত্বে পরামর্শক্রমে “মার্চ টু ঢাকা” র কর্মসূচী ঘোষণা করে।

কর্মসূচীকে সফল করার জন্য ঢাবি, রাবি,বেরোবি,বুয়েট, চুয়েটসহ পাবলিক – সরকারি- বেসরকারি স্কুল কলেজ ও মাদরাসার স্টুডেন্ট – শিক্ষকসহ সকল সাধারণ জনতা মাঠে নেমে আসে। দিনটি ছিল ৫ আগষ্ট,আন্দোলনকারীরা গনভবনের দিকে রওনা হয় তখন শুনা যায় এক শান্তনার বাণী যে আওয়ামী স্বৈরাশাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পলায়ন করে। সকলের মুখে হাসি ফুটে ওটে।

ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর গ্রামে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ হয়। এ যেন এক ১৬ বছর ব্যাপি কালো অধ্যায়ের অবসান ঘটলো আর সকল মানুষ একটু স্বস্তি পেলো। জালিমের জুলুম – নির্যাতনের ইতিহাস আল্লাহ যমিনেই দেখায়, হাশরেতো নিকাশ রয়েই গেছে। আসুন সরকার পতনের পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে সামান্য জেনে নেই।

এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা যা বলললেন : মৃত্যুর মিছিল যাতে আর দেখতে না হয়, তাই পদত্যাগ করেছি:——বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায় দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের মৃত্যু ঠেকাতেই পদত্যাগ করেছেন তিনি। ভারতের গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে।

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের কাছে দেওয়া এই বার্তা দেখেছে ইকোনমিক টাইমস। বার্তায় হাসিনা দাবি করেছেন, বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। চেয়েছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ তুলে না দেওয়ার কারণেই তাকে উৎখাত করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।

সজিব ওয়াজেদ জয়ের বিভিন্ন বিবৃতি :

১: আমার মা এখনো প্রধানমন্ত্রী: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পাঁচ দিনের মাথায় তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ বলেছেন, শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগই করেননি। সে সময়টুকু পাননি তিনি।


রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, ‘আমার মা দেশবাসীর উদ্দেশে একটি বিবৃতি দিয়ে তারপর পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ সময়ে আন্দোলকারীরা গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেয়। তিনি ব্যাগ গোছানোর সময়টুকুও পাননি। আমি যতদূর জানি, সংবিধান অনুযায়ী তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’, শুক্রবার ৯ আগস্ট দিবাগত রাত ২টার দিকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে তিনি রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন।

তবে জয় এমন দাবি করলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভিন্ন কথা বলেছেন। গত সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতের পথে সামরিক হেলিকপ্টারে করে রওয়ানা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই সেনাপ্রধান গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন। বিকেল ৪টার দিকে জেনারেল ওয়াকার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে তাদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। তার এই বক্তব্যের প্রায় আড়াই ঘণ্টা আগেই শেখ হাসিনা ভারতের পথে রওয়ানা দেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এর পরদিন রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। চার দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়।

শেখ হাসিনা ‘পদত্যাগ’ নিশ্চিতকরণঃ: শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি বলে তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যে দাবি করেছেন, সেটির বিপরীত বক্তব্য দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। গণ আন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ‘কাগজেকলমে পদত্যাগ’ করেছেন কি না, এমন প্রশ্নে রোববার এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আমি যেটুকু জানি, সেটা আপনাকে বলছি। কাউন্সিলের মিটিংয়ে আমি যেটা জানতে পেরেছি, সেটা হল যে, তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে আছে। ”এটুকু তথ্য কনফার্ম করা হয়েছে। তারপরে বাকিটুকু আমি বলতে পারব না।”

শেখ হাসিনা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না: সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, “আমার মনে হয় এখানেই শেষ। আমার পরিবার এবং আমি – আমাদের যথেষ্ট হয়েছে।”

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মি. ওয়াজেদ এসব কথা বলেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে সোমবার কারফিউর মধ্যেও ঢাকায় লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামে। এক পর্যায়ে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দিল্লি চলে যান। এরপরই গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সাধারণ মানুষের দখলে চলে যায়। শেখ হাসিনার পুত্র বিভিন্ন সময় একেরপর এক বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন।

পদত্যাগে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব :

১: শেখ হাসিনার দেশত্যাগে আওয়ামী লীগ নেতাদের ক্ষোভ : প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতাকর্মী চলে গেছেন আত্মগোপনে। আওয়ামী লীগের নেতা, এমপি, সদ্য পদত্যাগী সরকারের মন্ত্রী যারা ছিলেন তাদের কে কোথায় কিভাবে আছে তা দলেরও কেউ জানেন না।

কারো সঙ্গে কারো কোনো যোগাযোগ নেই। এক জনের খবর আরেক জন জানেন না। কারো সঙ্গে কারো যোগাযোগ হলেও তৃতীয় কেউ জানে না। যে যার মতো করে আত্মগোপনে রয়েছেন। প্রায় সবার মোবাইল ফোনও বন্ধ ৷ আওয়ামী লীগের কর্মীদেরও একই অবস্থা। পনের বছরের দোর্দণ্ড প্রতাপের শাসনের পর ছাত্র আন্দোলনের মুখে অনেকটা হুট করেই দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাওয়ার ঘটনায় তার দল আওয়ামী লীগের মধ্যে কার্যত চরম বিপর্যয় ও হতাশা নেমে এসেছে।

দলটির ‘হতভম্ব’ নেতাকর্মীদের অনেকের মধ্যেই তৈরি হয়েছে ক্ষোভ এবং বিস্ময়, কারণ এমন কিছু হতে পারে তার কোন ধারণা একদিন আগেও তারা পাননি। গত দু দিনে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী কয়েকজনের সাথে কথা বলেএমন ধারণা পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাই কার্যত এখন ‘আত্মগোপনে’ এবং কবে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কিংবা আদৌ পারবেন কি-না তা নিয়েও উদ্বিগ্ন অনেকে। এর ফলে দলকে টিকিয়ে রাখা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে দলের অনেকের মধ্যে। যদিও শেখ হাসিনার নিজ জেলা গোপালগঞ্জে ‘তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করার’ প্রতিবাদে মঙ্গলবার দু দফা মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মী।

জাগরণকে ব্যর্থ করতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নাটক:- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি একটা ফেক প্রোপাগান্ডা। বাংলাদেশের গণজাগরণকে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য ও নতুন সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য মিথ্যা ও বানোয়াট নাটকের প্রচার চালাচ্ছে একটি মহল। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্ব মতামত কেউ এটাকে বিশ্বাস করবে না।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ৫৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, গণআন্দোলনে যেসব ছাত্র-জনতা শহিদ হয়েছে, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। মহাসচিব বলেন, আজকে নতুন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, একই সঙ্গে আমরা একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই— বর্তমান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে, তাদের অনুরোধ অতিদ্রুত একটি নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এবং সমস্ত বিপদ কাটিয়ে সত্যিকারের একটি মুক্ত বাংলাদেশ তৈরি করবে। সেই সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের একটি সরকার গঠন হবে।


শেখ হাসিনা বলেছেন, সেন্টমার্টিন আমেরিকাকে দেয় নাই বলে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বাকোয়াজ; নিজে যখন ব্যর্থ হয়, তখন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়— এটি তাদের ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য। তারা সবাই জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য কাজ করছে। দেশকে আশঙ্কামুক্ত করার জন্য সবাইকে সজাগ থেকে রাস্তায় নামতে হবে। জনগণের কাছে এই হচ্ছে আমার প্রত্যাশা বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এম সাখাওয়াতের নেতিবাচক বক্তব্যে বি এন পি “র অবস্থান : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সোমবার ১২ আগস্ট রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আহত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগকে দল গঠন নিয়ে এক মন্তব্যের জন্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় রাজনৈতিক দলগুলার মধ্যে।


সাখাওয়াত হোসেন বক্তব্য দেয়ার পরই তাৎক্ষণিক বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টন এলাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে। নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রায় হাজার খানেক নেতাকর্মী নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি কাকরাইল মোড় হয়ে পলওয়েল মার্কেট ঘুরে আবারও নয়াপল্টন পার্টি অফিসের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিটের বিপুল সংখ্যক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ভারতের প্রতি আহ্বান গণ অধিকার পরিষদের :
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরু। তিনি বলেন, ভারত এটা না করলে ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও করবেন তাঁরা।


সম্প্রীতি সমাবেশে নুরুল হক বলেন, ‘২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে নির্বাচনে ভারত শেখ হাসিনাকে একচ্ছত্র সমর্থন দিয়েছিল। সারা বিশ্ব যখন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে, তখনো ভারত শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে মরিয়া। আমাদের পাশের দেশ ভারতকে বলব, আপনারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখুন। একটা দলের জন্য সম্পর্ক নষ্ট করবেন না। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দী বিনিময় চুক্তি রয়েছে। শেখ হাসিনাকে অন্য দেশে পাঠানোর তদবির না করে অবিলম্বে বাংলাদেশে পাঠানো হোক, তা না হলে ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও করবে গণ অধিকার পরিষদ।’

নুরুল হক বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। তাঁরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করেছে। তাদের উচিত সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা। আশা করি, এই সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে। যদিও সব কাজ সম্পূর্ণ করতে পারবে না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যে টাকা পাচার করেছে, সে পাচারকারীদের এই সরকার অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করবে আমরা এটার আশাবাদী।

হেফাজতে ইসলাম যা বলে : হেফাজতের আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি এবং বিশেষ করে আলেমদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সাধুবাদ জানাই।

অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা বলব, দ্রুত একটি জাতীয় মীমাংসাপত্র তৈরি করুন, যার ভিত্তিতে সামাজিক যত বিভেদ ও বিভাজন দূর হবে। সারা দেশে প্রতিশোধ ও জিঘাংসার যে মচ্ছব শুরু হয়েছে, তা বন্ধে একটি জাতীয় মীমাংসাপত্র এখন আবশ্যক। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রতিটি হত্যা ও জুলুমের সুষ্ঠু বিচার হবে, কিন্তু বদলা নয়। বদলা নিতে গেলে ন্যায়বিচার ধ্বংস হবে।

আমাদের সমাজ থেকে শত্রুবধের রাজনীতি ও আকাঙ্ক্ষাকে চিরতরে দূর করতে হবে, যাতে করে ভারত-প্রযোজিত শাহবাগী ফ্যাসিবাদের দ্বিতীয় জন্ম না হয়। আমরা লড়াই-সংগ্রাম করেছি ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, যাতে প্রাপ্য অধিকার ভোগ করে মানুষ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে এবং নির্ভয়ে ও নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে। আমাদের বিজয়কে সে পথেই নিয়ে যেতে হবে।’

আরও বলেন, ‘এছাড়াও একটি নতুন শাসনবিধি প্রণয়নের উদ্যোগ দ্রুত নিতে হবে। আমরা আবারও সেই পুরনো ছক ও বৃত্তে হাঁটতে চাই না। শাসনব্যবস্থা ও রাষ্ট্রকাঠামোর কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে নতুন শাসনবিধি অনিবার্য। অযথা সময়ক্ষেপণের চড়া মূল্য যাতে আমাদের দিতে না হয়।

এখনো নানা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র চলছে। আওয়ামী অপশক্তি শান্তির বদলে নতুন কোনো নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা করলে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে তাঁরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দেশের পরিস্থিতিকে নৈরাজ্য থেকে রক্ষা করতে সরকারকে দূরদর্শী ভূমিকা পালন করতে হবে। সহিংসতার শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাগুলোর নামকরণের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে না নেওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।

হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান সাহেব বলেন, ‘২০১৩, ২০১৬ এবং ২০২১ সালে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের যারা নির্মমভাবে শহীদ করেছে, আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি হেফাজতের দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সকল বিষয় বাদ দিতে হবে। এ ছাড়া দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের এবং তাদের উপাসনালয়ের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। এই ব্যাপারে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সারাংশ হলো দেশ যে সরকারই পরিচালনা করুক বাংলাদেশে যেন শান্তি- শৃঙ্খলা ভাতৃত্ববোধ বজায় থাকে। এবং সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমের দেশে ইসলাম ধর্ম বিরোধী কোনো আইন ও কার্যকলাপ যাতে না হয় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সকলেই এটা আশাবাদী।

সাজিদুর রহমান জামালী

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button