BiographyHistory

চান্দারলী হলিল পাশা

ওজিরে আজম চান্দারলি হলিল পাশার জীবনী

চান্দারলি হালিল পাশা, যিনি সুলতান মুরাদ দ্বিতীয় তার রাজত্বের কয়েক বছর এবং সাম্রাজ্যের শাসক দ্বিতীয় মেহমেদের 1439 থেকে 1 জুন 1453 পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে এর অধীনে একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী অটোমান গ্র্যান্ড উজির ছিলেন। তিনি ছিলেন চান্দারলি পরিবারের সদস্য আর এ পরিবার ছিলো অটোমান সাম্রাজ্যের একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার। তার দাদাও (চান্দারলি হালিল পাশা দ্য এল্ডার) মুরাদএর অধীনে গ্র্যান্ড উজির হিসাবে কাজ করেছিলেন।

চান্দারলি হলিল পাশা ও তার পরিবারের বিস্তারিত বিবরণ :

উসমানীয় প্রদত্ত নাম “হালিল” । উপাধি পাশা এবং পারিবারিক নাম হল “চান্দারলি”। চান্দারলি হালিল পাশা ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যে গ্র্যান্ড উজিরের পদে অধিষ্ঠিত চান্দারলি পরিবারের অন্যতম সদস্য। তার পিতা চান্দারলি ইব্রাহিম পাশা । তার চাচা চান্দারলি আলী পাশা । এবং তার দাদা চান্দারলি হালিল পাশা অতীতে এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার নিজের ছেলে চান্দারলি ইব্রাহিম পাশাও পরবর্তীতে গ্র্যান্ড উজির হয়েছিলেন । তিনি একজন বিচক্ষণ ও বিজ্ঞ ওজির ছিলেন।

সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ রাজনীতির চেয়ের ধর্ম এবং শিল্পে বেশি আগ্রহী ছিলেন। সুলতান মুরাদ যখন মনীসা শহরে অবসর নেন । তখন সুলতানের সুরক্ষার জন্য হালিল পাশা নিকটবর্তী একটি শহরে একটি দুর্গ তৈরি করেছিলেন, যার নাম পরিবর্তন করে তার নিজের পরিবারের নামানুসারে চান্দারলি রাখা হয়েছিল (এখনও ক্যান্দারলিতে দুর্গটি সবচেয়ে বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক)।

দ্বিতীয় মুরাদের অবসর গ্রহণের এই সময়ে নামমাত্র সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ। তখনও তিনি কিশোর ছিলেন । হালিল পাশাই রাজধানী এদির্নে সাম্রাজ্যের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। সাম্রাজ্যের সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। সামরিক বাহিনীদের মধ্যে জেনেসারী বাহিনী তার ইশারায় ওটতো, বসতো। এক কথায় হালিল পাশা ছিলেন রাজনীতির ময়দানে পাকা খেলোয়ার। তিনি সুলতানদের চেয়েও ক্ষমতাবান ছিলেন।

সুলতান মেহমেদ কিশোর অবস্থায় সিংহাসনে আরোহন করার পর ইউরোপ থেকে বিভিন্ন ফেৎনা রাষ্ট্রীয় সমস্যা উঁকি দিতে থাকে তখন হালিল পাশা মেহমেদকে ক্ষমতাচ্যুত করে পুনরায় ২য় মুরাদকে সিংহাসনে বসান। মুরাদ খান মারা যাওয়ার পরে আবার মেহমেদ ২য় সিংহাসনে বসেন।যদিও হালিল পাশাকে প্রধান ওজির হিসাবে বহাল রাখেন কিন্তু সুলতান মেহমেদ আগের কথা ভুলে যান নাই।

রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কারণে সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ চান্দারলির প্রতি বিরক্তিকর মনোভাব পোষণ করেন । এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সাম্রাজ্যে তাদের প্রভাব বিস্তার ছিলো। চান্দারলি পরিবার অত্যন্ত ধনী হয়ে উঠেছিল সম্ভবত ক্ষমতাসীন অটোমান পরিবারের চেয়েও বেশি ।

কনস্টানটাইনের চিঠি ও চান্দারলির জবাব :

দ্বিতীয় মেহমেদ যখন সুলতান হন, তখন বাইজেন্টাইন সম্রাট কনস্টানটাইন একাদশ অটোমানদের কাছে একজন বার্তাবাহক পাঠান, যাতে দ্বিতীয় মেহমেদ ওরহানকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। ওরহান একজন ওসমানী পরিবারের সদস্য ছিলেন এবং নিজেকে সিংহাসনের অধিকারী হিসেবে দাবি করেন এবংকয়েকবার বিদ্রোহও করেন এবং কয়েকবার যুদ্ধও করেন। চান্দারলি হালিল পাশা এই বার্তায় ক্ষুব্ধ হন এবং বার্তাবাহকের জবাব দেন।

“তুমি বোকা গ্রীক, তোমার ধূর্ত পথ আমি অনেকদিন ধরেই জানি। প্রয়াত সুলতান আপনার একজন নম্র ও বিবেকবান বন্ধু ছিলেন। বর্তমান সুলতান মেহমেদ একই মনের নন। কনস্টান্টিনোপলের কাঁধে তার নিশ্বাস ফেলছে খুব শিগ্রই সুলতান মেহমেদ তা বিজয় করবে”।

“আমাদের সাম্প্রতিক শান্তি চুক্তির কালি যখন সবে শুকিয়ে গেছে তখন আপনি আপনার কল্পনা দিয়ে আমাদের ভয় দেখাতে চান এমনটা ভেবে থাকলে আপনি বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। আমরা শক্তি বা জ্ঞান ছাড়া শিশু নই। আপনি যদি মনে করেন যে আপনি কিছু শুরু করবেন তাহলে তা করুন। আপনি যদি থ্রেসে ওরহানকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা করতে চান এগিয়ে যান। আপনি যদি হাঙ্গেরিয়ানদের দানিউব পার করে আনতে চান তবে তাদের আসতে দিন। আপনি যদি অনেক দিন ধরে হারিয়ে যাওয়া জায়গাগুলি পুনরুদ্ধার করতে চান, তবে এটির চেষ্টা করুন”।

“তবে এটি জেনে রাখুন, আপনি এই জিনিসগুলির কোনওটিতেই অগ্রসর হওয়ার সাহস করবেন না। যদি আপনি তা করেন তাহলে আপনার যা কিছু আছে তা হারাবেন”।

ওজিরে আজমের ব্যাক্তিত্ব:

চান্দারলি হালিল পাশা ছিলেন মারাত্মক একজন জিনিয়াস লোক। পলিটিক্যাল প্যাঁচে তাকে হারানো অসম্ভব ছিলো। এমনকি মুরাদ খান,মেহমেদ খানের মতো কৌশলী সুলতানরাও তার কাছে হার মেনেছিলেন। অবশ্যই বুদ্ধিমত্তা এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের জন্য সে মহান একজন উজির ছিলেন ৷ কিন্তু সিরিজ দেখে অনেকেই তার বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করতেছে৷

হালিল পাশার সাম্রাজ্যের প্রতি বিশ্বস্ততা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু সাম্রাজ্য থেকেও উনি উনার ক্ষমতাকে বড় করে দেখতেন এবং অহংকারী ছিলেন , যে কারণে তার ক্ষমতা যাতে খর্ব না হই সে জন্য বিভিন্ন কুট কৌশল অবলম্বন করে সুলতান মুরাদ মারা যাওয়ার পর তার সন্তানদের নিয়ে সালতানাতের মধ্যে জেনেসারি দ্বারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এতে বহু সেনা শহীদ হই। হালিল পাশার কারণে মুসলিমদের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হই।

সুতরাং তার থেকে সুলতান মেহমেদের আমলে বিশৃঙ্খলা ছাড়া সে কিছুই দিতে পারে নাই। হালিল পাশা সুলতানদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চাইতো সবসময় এবং এটা সুলতান মুরাদ এবং মেহমদ টের পেয়েছিলো, কিন্তু সঠিক সুযোগ না পাওয়ায় তাকে কিছু করতে পারতো না।তবে ইস্তাম্বুল জয় করার পরে সুলতান আর কিছু চিন্তা না করে কাম সেরে ফেলে। তবে হালিল পাশার মেধার প্রশংসা করতেই হয়। সাম্রাজ্যের জন্য অনেক কিছু করেছেন।

কি হতো যদি সুলতান মেহমেদ খান চান্দারলি হালিল পাশার পরামর্শ মেনে নিতেন?

ওজিরে আযম হালিল পাশা কনস্ট্যান্টিনোপল জয়ের বিরুদ্ধে ছিলেন। কনস্ট্যান্টিনোপল জয়ের চেয়েও শক্তিশালী পরিকল্পনা ছিলো তার মাথায়। চান্দারলি কেনো কনস্ট্যান্টিনোপল জয়ের বিরোধিতা করেছিলেন সেটার যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য যুক্তি ছিলো তার কাছে। মেহমেদ খানের পরদাদা বায়েজিদ খান কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করে রেখেছিলেন আটবছর ধরে। এরপর তাইমুরের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিলেন।

সাম্রাজ্যের শেষ দেখে ফেলেছিলো পুরো বিশ্ব। মেহমেদ খানের পিতা মুরাদ খান,মুরাদ খানের চাচা মুসা সেলেবিও অবরোধ করেছিলেন এই অজেয় শহর। কেউ সফল হতে পারেননি। তাই চান্দারলি নতুন করে ঝুঁকি নিতে মোটেও রাজী ছিলেন না।

আবার ঐ সময় কনস্টান্টিনোপল শুধুমাত্র একটি শহর ছাড়া আর কিছু ছিলো না। ওদের চলাফেরার স্বাধীনতা বলতে ছিলো শুধুমাত্র গোল্ডেন হর্ন। মানে ব্ল্যাক সি’র সাথে বসফরাসের মিলনস্থল। ওই পথে তাদের অধিকার ছিলো বলে মোটামুটি আমদানি-রপ্তানি করার সুযোগ ছিলো। কিন্তু,বসফরাসের দু’পারেই ছিলো উসমানিয়দের একচ্ছত্র আধিপত্য।

বায়েজিদ খান নির্মান করেছিলেন আনাদোলু হিসারি। এ-ই দূর্গ বসফরাসের এশিয় অংশের ওয়াচ টাওয়ার হিশেবে কাজ করতো। আর দ্বিতীয় মেহমেদ খান নির্মান করেছিলেন রুমেলি হিসারি। ইওরোপিয় অংশের দ্বাররক্ষী ছিলো এই দূর্গ। অর্থাৎ,গোল্ডেন হর্ন ছাড়া কনস্টান্টিনোপলকে সম্পূর্নরুপে আবদ্ধ করে রেখেছিল উসমানি সাম্রাজ্য। তাই আলাদা করে এই শহর জয়ের পেছনে এতো এতো অর্থ আর সৈন্য কোরবান করার পক্ষপাতি ছিলেন না হালিল পাশা।

চান্দারলি’র কাছে ছিলো আরো দারুণ ও কৌশলী পরিকল্পনা। যেহেতু বসফরাস ছিলো উসমানিয়দের দখলে,চান্দারলি চেয়েছিলেন উসমানিয়রা আরো পশ্চিমে যাক। উসমানিয়রা কখনোই পশ্চিম ইউরোপে পা রাখতে পারেনি। চান্দারলি হালিল পাশা পশ্চিম ইওরোপ জয় করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

জার্মানি,ইতালি, রোম(হলি রোমান এম্পায়ারের রাজধানী), অস্ট্রিয়া,বেলজিয়াম,সুইজারল্যান্ড,এরপর ফ্রান্স। কনস্টান্টিনোপল অবরোধে সুলতান মেহমেদ খান যে পরিমান শক্তি আর অর্থ ব্যয় করেছিলেন, চান্দারলি হালিল পাশার পরিকল্পনা মেনে এগিয়ে গেলে পশ্চিম ইওরোপের অর্ধেক জয় করা সম্ভব ছিলো বার্লিন, মিউনিখ, হাইডেলবার্গ, রোথেনবার্গ,মেইনজের দুয়ারে হয়তো জানিসারিদের যুদ্ধ-সংগীত বাজানো হতো৷কন্সটান্টিনোপল জয়ের চেয়ে আরো কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারতো এটি।

কিন্তু,আল্লাহর ইচ্ছে ভিন্ন ছিলো৷ শেষ পর্যন্ত উসমানিয়রা কখনোই পশ্চিম ইওরোপে পা রাখতে পারেনি। এমনকি ১৬৮৩ সালে ভিয়েনা অবরোধ করতে গিয়ে বিধ্বস্ত হয় মুস্তফা পাশার নেতৃত্বাধীন অটোমান মিলিটারি। ভিয়েনাকে বলা হতো পশ্চিম ইওরোপের দরজা। পশ্চিম ইওরোপের দরজা থেকেই শুরু হয় অটোমানদের পতন।

চান্দারলির চাওয়া ও মনের তামান্না :

১৪৫৩ সালে সুলতান মেহমেদ যখন কনস্টান্টিনোপল জয় করতে যান তখন তার সাথে ছিল মাত্র ৮০ হাজার সৈন্য। তার নৌবাহিনী ছিল অটোমানদের প্রথম নৌবাহিনী। যারা তখন পর্যন্ত কোন নৌযুদ্ধে অংশ নেয়নি। ভৌগলিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে জার্মানি তো দূর, হাঙ্গেরীর ভিতরে ঢুকার সামর্থ্যও অটোমানদের ছিল না।

১ম: মাত্র ৮০ হাজার সৈন্য, আনকোরা নৌবাহিনী, বিশাল দুটি জায়ান্ট ক্যানন নিয়ে নদী ও পর্বতঘেরা হাঙ্গেরীতে ঢুকা অটোমানদের জন্য ছিল সিংহের গুহায় ঢুকার মতোই কঠিন। ভিয়েনা জয়ের আগে বেলগ্রেড জয় করতে হতো। বেলগ্রেড ছিল ইউরোপের দরজা। আর বেলগ্রেড ছিল হাঙ্গেরীর অন্তর্গত ক্যাথলিক রাজ্য। বেলগ্রেড ছিল মজবুত এক দুর্গ।

সাভা, ড্রাভা, দানিয়ুব, তিনটি নদী দিয়ে বেলগ্রেড ঘেরা ছিল। অগভীর এই নদীগুলোতে চালানোর মতো জাহাজ তখন পর্যন্ত অটোমান নৌবাহিনীতে ছিল না। এই কারণেই ১৪৫৬ সালে সুলতান আল ফাতিহ বেলগ্রেডে চরম পরাজয় বরণ করেন। তার যে বাহিনী কনস্টান্টিনোপল জয় করেছিলো, সেই বাহিনীই বেলগ্রেড জয় করতে ব্যর্থ হয়। অপরদিকে অটোমানদের পেটের ভিতরই ছিল কনস্টান্টিনোপল।

২য়: সুলতানের হাতে যেই দানবীয় কামান ছিল, ব্যাসিলিকা,ওই কামানটি টানতে ৫০ জোড়া ষাঁড়ের প্রয়োজন হতো। আজ থেকে ৫০০ বছর আগে যখন কোন মোবাইল ফোন ছিল না, তখন ওই কামান এডির্নে থেকে টেনে নিয়ে পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে অগভীর ৪ টি নদী পেরিয়ে দুর্গম ইউরোপের পেটের ভিতর বেলগ্রেড দুর্গে টেনে নিয়ে যাওয়া কতটা কঠিন ছিল তা হয়তো আমাদের পক্ষে কল্পনা করাও এখন সম্ভব না। ইউরোপের মুষ্টিমেয় সৈন্যের গেরিলা হামলাতেই বিশাল অটোমান বাহিনী নাস্তানাবুদ হয়ে পড়তো। যেখানে অটোমানরা ছিল ভিনদেশী আর তাদের শত্রুরা ছিল পথের প্রতিটি ধূলিকণা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

৩য়: কনস্টান্টিনোপল আর পশ্চিমের মধ্যে যে সমস্যা নিয়ে টানাপোড়েন চলছিলো তা হলো ক্যাথলিক-অথোডক্স সমস্যা। সুলতান মেহমেদ সফলভাবে এই বিভেদ আরো ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন বলেই পশ্চিম থেকে কনস্টান্টিনোপলের জন্য সাহায্য এসেছিলো। কিন্তু বেলগ্রেডের রাজা ছিল ক্যাথলিক। পোপ একে বলত ক্রিশ্চিয়ানিটির দুর্গ। বেলগ্রেড আক্রমণ করতে গেলে সমগ্র ইউরোপ এক হয়ে যেত। অপরদিকে কনস্টান্টিনোপল ছিল খ্রিস্টান দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন।

বস্তুত হালিল পাশা চেয়েছিলেন দিগ্বিজয়ের পদ্ধতিতে ইউরোপ জয় করতে। কিন্তু সুলতান মেহমেদের ভূরাজনীতি ছিল তার পরদাদা ১ম বায়েজিদের থেকে আলাদা।চান্দারলি চেয়েছিলেন উসমানিয়রা আরো পশ্চিমে যাক। উসমানিয়রা কখনোই পশ্চিম ইউরোপে পা রাখতে পারেনি। চান্দারলি হালিল পাশা পশ্চিম ইওরোপ জয় করার পরিকল্পনা করেছিলেন। জার্মানি,ইতালি, রুম ইত্যাদি,,,, হালিল পাশার পরিকল্পনা মেনে এগিয়ে গেলে পশ্চিম ইউরোপ জয় করা সম্ভব ছিলো।

কেন সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ হালিল পাশার ফাঁসির আদেশ দেন?

এটা বেশ স্পষ্ট. হালিল পাশা ছিলেন দ্বিতীয় মেহমেদের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরোধী রাজনৈতিক অংশের প্রধান। দ্বিতীয় মেহমেদ হালিল পাশার জন্যে তার সিংহাসন হারান এবং তার পিতা দ্বিতীয় মুরাদ দ্বিতীয়বার সুলতান হন।

হালিল পাশা খুব শক্তিশালী ছিলেন এবং সামরিক বাহিনী তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। তদুপরি, তিনি বিখ্যাত তুর্কি বংশোদ্ভূত চান্দারলির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যেটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সরকারী বিষয়ে অবদান রেখেছিল। অবশেষে, দ্বিতীয় মেহমেদ তাকে তার চূড়ান্ত ক্ষমতার জন্য হুমকি শক্তি হিসাবে দেখেছিল। সরকারী অজুহাত: হালিল পাশা ঘুষ নেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন (বাইজান্টাইন সরকার তাকে ঘুষ দেওয়ার কথা বলেছিল) অবশেষে ইতিহাসবিদরা একমত হন যে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।

বাস্তবে, হালিল পাশা এত ধনী এবং ক্ষমতাবান ছিলেন, এমনকি তিনি চাইলেও কোনো ধরনের ঘুষের প্রয়োজন পড়েনি। রাজনৈতিকভাবে তিনি কনস্টান্টিনোপল (ইস্তাম্বুল) জয়ের বিরুদ্ধে ছিলেন কারণ তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে, এর ফলে ইউরোপীয় শক্তির দ্বারা তুর্কিদের বিরুদ্ধে একটি মহা যুদ্ধ হবে।

তিনি দাবি করেছিলেন যে, ইস্তাম্বুল একটি পঁচা আপেল এবং সময়ের সাথে সাথে তুর্কিদের হাতে পড়ে। এই মুহুর্তে ঐতিহাসিক ইস্তাম্বুল যেভাবেই হোক তুর্কি দ্বারা বেষ্টিত ছিল এবং শহরে এমনকি মসজিদ এবং রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত পোষণকারী তুর্কি ও তুর্কি ব্যবসায়ীরা ছিল। তিনি ভয় পেয়েছিলেন যে, সামরিক অভিযানের ফলে বাণিজ্য সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল হালিল পাশা সুলতান মেহমেদ দ্বিতীয় কনস্টান্টিনোপল জয় করার সময় হালিল পাশা বাইজেন্টাইনদের পক্ষে কাজ করেছিলেন। এটা বিশ্বাসঘাতকতা আর এ কাজটাই মূলত তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়।

চান্দারলির পাশার বন্দিত্বও মৃত্যু :

1453 সালে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পরপরই সুলতান মেহমেদ দ্বিতীয় দ্বারা সংঘটিত প্রথম কাজগুলির মধ্যে একটি ছিল চান্দারলি হালিল পাশাকে বন্দী করা। শহরটি 29 মে 1453 সালে নেওয়া হয়েছিল এবং 1 জুন 1453-এ হালিল পাশাকে বন্দি করে কারাগারে দেওয়া হয়। তাকে 10 জুলাই 1453-এ মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল। এবং তাকে তার পূর্বপুরুষদের মত ছাদ ছাড়াই একটি খোলা সমাধিতে ইজনিক শহরে-এ সমাহিত করা হয়। চান্দারলি হালিল পাশা ছিলেন সুলতান কর্তৃক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত প্রথম উসমানীয় গ্র্যান্ড উজির। পরবর্বতিতে চান্দারলি হালিল পাশার ছেলে “চান্দারলি ইব্রাহিম পাশা” ও প্রধান ওজিরের দায়িত্ব পালন করেন।

-সাজিদুর রহমান

আরো কিছু লেখা পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button