Biographyখোলা কলাম

আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান

আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান এর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্তঃ

ডা. শফিকুর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অনন্য নাম। এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান অন্যতম। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও জাতীয় রাজনৈতিক জীবনে তিনি সততা, যোগ্যতা, মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। দেশের প্রতিটি দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য যিনি সবার আগে ছুটে যান তিনি হলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জননেতা জনাব ডা. শফিকুর রহমান।

জন্ম ও বংশ পরিচয় :
জাতির এই সাহসী সন্তান ও প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ জনাব ডা. শফিকুর রহমান ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম মোহাম্মদ আবরু মিয়া এবং মাতার নাম মরহুমা খাতিরুন নেছা। তাঁর বর্তমান ঠিকানা সিলেট মহানগরীর শাহপরান থানার সবুজবাগ এলাকায়। ডা. শফিকুর রহমান এর তিন ভাই ও এক বোন। ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

পারিবারিক জীবনঃ
ডা. শফিকুর রহমান ১৯৮৫ সালে ডা. আমিনা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ডাঃ আমিনা বেগম অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক। বড় মেয়ে এফসিপিএস (কার্ডিওলোজি) অধ্যয়নরত এবং একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেজিস্ট্রারার হিসেবে কর্মরত। ছোট মেয়ে এমবিবিএস ও এমপিএইচ ডিগ্রী অর্জনের পর এখন একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। একমাত্র পুত্র এমবিবিএস শেষ করে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন।

শিক্ষা ও ক্যারিয়ার


ডা. শফিকুর রহমান ১৯৭৪ সালে স্থানীয় বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি এবং ১৯৭৬ সালে সিলেট এম সি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজ (বর্তমান এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ) থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জনের পর চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন।

সামাজিক কাজ সমূহ : জননেতা ডা. শফিকুর রহমান প্রখ্যাত রাজনীতিকই নন বরং তিনি একজন খ্যাতিমান সমাজ সেবক, বলিষ্ঠ সংগঠক এবং সফল উদ্যোক্তা। তিনি একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। একনজরে আমরা ডা. শফিকুর রহমানের সামাজিক কাজের কিছু অংশ দেখবো।

১. একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান

২. একটি হাইস্কুল ও কলেজ এর গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসাবে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন

৩. একাধিক হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন

৪. একটি কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন

৫. একাধিক ইয়াতিমখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা

৬. একাধিক দাতব্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা

৭. কয়েকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা

৮. ছাত্রজীবনে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী ক্লাব ”পালস” প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসাবে দায়িত্বপালন।

৯. একাধিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা

১০. সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের আজীবন সদস্য

১১. বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য

১২. বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর আজীবন সদস্য
১৩. সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সদস্য

রাজনৈতিক জীবন : বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ডাঃ শফিকুর রহমান জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। দশম শ্রেণিতে পড়াকালে জাসদ ছাত্রলীগের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করলেও সময়ের পরিক্রমায় হয়ে উঠেছেন দেশের বৃহত্তম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের প্রধান। ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। পরবর্তিতে এই সংগঠনের সিলেট মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি এবং সিলেট শহর শাখার সভাপতির দয়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৪ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের মাধ্যমে তিনি বৃহত্তর রাজনীতিতে পদার্পন করেন। এরপর সিলেট শহর, জেলা ও মহানগরী আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়ে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে করেন। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর রুকনগণের (সদস্য) প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে আমীর নির্বাচিত হন এবং ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ২০২০-২০২২ কার্যকালের জন্য তিনি আমীরে জামায়াত হিসেবে ১ম বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন। ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর রুকনগণের (সদস্য) প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে দ্বিতীয় বারের মতো পুনরায় আমীর নির্বাচিত হন এবং ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর ২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য তিনি আমীরে জামায়াত হিসেবে ২য় বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন এবং অদ্যবধি সংগঠনের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে উল্লেখযোগ্য দায়িত্বসমুহ:

১৯৮৫ : কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার নির্বচিত সদস্য

১৯৮৬-৮৮ : সিলেট জেলা সেক্রেটারী

১৯৮৯-৯১ : সিলেট জেলা নায়েবে আমীর

১৯৯১-৯৮ : সিলেট জেলা আমীর

১৯৯৮ : কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য

১৯৯৮-২০০৭ : সিলেট মহানগর আমীর

২০১০ : এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল

২০১১ : নির্বাহী পরিষদ সদস্য

২০১১ : ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল

২০১৬ : সেক্রেটারী জেনারেল

২০১৯ : আমীরে জামায়াত অদ্যবধি পর্যন্ত।

ডা. শফিকুর রহমানের ব্যাক্তিত্ব : ডা. শফিকুর রহমান। যিনি দেশের বৃহত্তম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির। মিষ্টভাষী শফিকুর রহমানের অমায়িক ব্যবহার, স্পষ্ট বক্তব্য, নেতৃত্বের দক্ষতা, সর্বোপরি সামাজিক ও কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। গত ৫ আগস্ট নতুন করে আলোচনায় এসেছেন তিনি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্রই আলোচিত হচ্ছে ডা. শফিকুর রহমানের নাম।


৬৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিকের জাসদ ছাত্রলীগ থেকে দেশের বৃহৎ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কান্ডারি হয়ে ওঠার গল্প। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা যেদিন দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, সেদিনই আলোচনায় আসেন জামায়াতে ইসলামীর আমির। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও তার নাম উচ্চারণের মধ্য দিয়ে নতুন করে সামনে আসেন ডাক্তার শফিকুর রহমান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন থেকে শুরু করে মন্দিরসহ সংখ্যালগুদের ঘরবাড়ি পাহারা, সব কাজে সামনের সারিতে দেখা যায় জামায়াতকে।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শহিদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অর্থ সহযোগিতা এবং সবশেষ বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জামায়াত আমিরের বক্তব্য মন জয় করেছে নেটিজেনদের। যেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের বাসায় মেহমান হয়ে এসেছি।’

বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানের পরপরই জামায়াত নেতার ঘোষণা- ‘প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা’। বৈষম্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু শব্দের কবর রচনা হোক, আমাদের পরিচয় হোক বাংলাদেশি।’

বিদেশ ভ্রমনঃ তিনি পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য সৌদি আরব এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা সেমিনারে যোগদানের জন্য যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানী, অষ্ট্রিয়া, স্পেন, গ্রীস, তুরস্ক, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিফাইন্স, ব্রুনাই ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। More

সাজিদ মোল্লা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button